#দাদার_মোটরসাইকেল_বিলাপ (৩০)
#মালপত্র_কিনে_পরে_ফেলা (#Biking_and_Wearing_things)
মোটরসাইকেল প্রেমি বন্ধুবান্ধব, খাশ করে নতুন প্রজন্মের ছেলেপুলেদের থেকে অনেক নতুন জিনিস শিখি। সেই প্রসঙ্গে দাদার লেখা এই মোটরসাইকেল বিলাপ সিরিজ ৩০ ছুঁয়ে ফেললো… বারবারই বলি.. এই চিন্তাভাবনাগুলো একান্তভাবে আমার নিজস্ব, পড়ে ফেলে কাউকে যে কিছু করতে হবে, মানতে হবে, সেরকম একদমই নয়, বাইকাররা একান্তভাবেই সবাই জ্ঞানী, সবাই জানে কি করা উচিৎ, কি নয়।
আমার এক বাচ্চা বাইকার বন্ধুর সাথে আড্ডা হচ্ছিল সেদিন বসে, বয়স তার মেরেকেটে ২২, ইঞ্জিনিয়ারিং এর ফোরথ্ ইয়ারে পড়ে, ক্যাম্পাস থেকে চাকরি পেয়েছে, তারই পার্টি আর কি… বাইকার ভাই খুবই নামি এক বাইকার, তার মোটরসাইকেলটি সুন্দর এক ২২০ সিসির স্পোর্টস সিরিজের, সারা শরীরে বিভিন্ন সেফটি গিয়ার পরা… মাথায় এমটি হেলমেট, গায়ে বাইকিং ব্রাদারহুডের জ্যাকেট, নিচে লী জিন্সের প্যান্ট সাথে স্যয়কোর হাঁটু-গার্ড, পায়ে ফাইলার রাইডিঙ বুট, হাতে প্রোবাইকার এর চামড়ার গ্লাভস, চোখে ফাস্ট ট্র্যাকের চশমা, পকেটে হাজার পনেরোর মোবাইল … সারা শরীরেই অন্তত ৭০-৮০ হাজার টাকার মালপত্র পরে বসে আছেন গুরুদেব বাইকার। দেখেই সর্বপ্রথম একটাই কথা মনে আসে …
“ক্ষীণ দেহ খর্বকায় মুণ্ডু তাহে ভারী,
যশোরের কই যেন নরমূর্তি ধারী”
জিজ্ঞাসা করে ফেল্লুম – ” হ্যাঁ রে, চাকরিতে মাইনে কতো দেবে? “.. বাইকার ভাইয়ের সপ্রতিভ উত্তর – ” স্টার্টিং ১০ হাজার, তারপর বাড়বে”… মনে প্রশ্ন থেকে গেল, ১০ হাজার মাইনে হবে, জীবন চালাতে হবে বাইরের শহরে, তার আগেই এই ৮০ হাজারের মালপত্র কিনে পরে ফেলেছিস? কিন্তু লজ্জার মাথা খেয়ে আর জিজ্ঞেস করে উঠতে পারলাম না, কি দরকার ভাই; সবাই ত জ্ঞানী। জিজ্ঞেস করলাম অবশ্য … “বাইকিং?? ওইটা সাথে সাথে চলবে”.. তার জবাব – “হ্যা কাকু, বাইকিং তো আমার ড্রীম, বাইকিং তো আমার প্যাশন”।
গত ছয় মাস থেকে টিভিতে চোখ রাখলে একটা জিনিস স্পষ্ট হয়… ভারতবর্ষে বাইকাররা নজর কাড়ছে.. অর্থাৎ তারা যে এক কম্যুনিটি, সেটা ব্যবসাদাররা ভালোই বুঝে গেছে। আমার নিজের দেখা ; বাইক, বাইকার, প্যাশন, ফলো ইয়োর ড্রীম ইত্যাদি চাটনি স্লোগান মেরে হুইস্কি, গয়না, স্যানিটারী-ন্যাপকিন, মোবাইল ফোন ইত্যাদির বিক্রি চূড়ান্ত; রাইডিং গিয়ার আর এ্যাক্সেসরী তো ছেড়েই দিলাম। বাজারের ভাবনা – ” এই বাইকাররা নতুন মুরগী, বেচো, বেচো – এরা কিনবে – কেন না এদের মাথার মধ্যে ঢুকে গেছে – বাইক চালিয়ে বেড়ানো মানে – প্যাশন, ড্রীম ইত্যাদি বিলাতী শব্দ, খুব কম জনই যার মানে বোঝে; কিন্তু এরা ওই হাজার হাজার টাকার মাল কিনে যাবে – কেননা না কিনলে, ওর নিজের বাইকার ভাইয়েরাই বলবে – তুমি ভাই জিনিসপত্র পরো নি বা কেনো নি, তুমি বালের বাইকার”।
আমাদের দেশ একটু অর্থনৈতিক ভাবে অদ্ভুত – এখানে যদি ১০০ জন বাইক চালায়, তার মধ্যে ৯৫ জন ওই সমস্ত মালপত্র (জ্যাকেট ইত্যাদি) জানেওনা কি, কিন্তু তাদের অনেকেই মাসে ১০,০০০ কিমির ওপর বাইক চালায়। আমি কখনোই বলছি না যে ওই সমস্ত মালপত্র কিনে পরে ফেলা খারাপ, একটা মিনিমাম সেফটি দেয় জিনিসগুলো, যদিওবা মৃত্যুঘাতী এ্যাক্সিডেন্টের থেকে বাঁচায় না। আমাদের সবাই ওই সমস্ত মালপত্র পরে মুখে বলি “সেফটি” – কিন্তু মনে মনে জানি, ওটা একটা গ্ল্যামার ড্রেস – পরে ফেললেই বোঝানো যাবে – হুঁ হুঁ বাবা – আমাকে যা তা ভেবো না, আমি হনু।
আমাদের দেশে, যেখানে ইঞ্জিনিয়ারিং করে মাইনে দশ হাজার, বাকিদের চপ শীল্প করতে হয় – সেখানে ওই হাজার হাজার টাকার মালপত্র কিনে পরে ফেলার চাপ তো মারাত্মক। তাই আমার মনে হয়, আজকের দিনে সবচেয়ে জরুরি – বাইকিং ব্যাপারটিকেই de-glamourize করা। এটা একটা আমাদের দেশে হবি বা পাসটাইম। কয়েকজন আছেন যারা এটাকে প্রোফেশনালি নেন, তারা অন্য। কিন্তু বাকিদের জন্য বোঝা জরুরি, যে peer-pressure এ পড়ার কোনো কারণই নেই ; একটা গেঞ্জি, প্যান্ট আর জুতো পরে দিব্বি বাইকে দেশ-বিদেশ বেড়িয়ে ফেলা যায়, দরকার শুধু সেফটি মানসিকতা, ঠিকঠাক চালানো।
বাইকার এর জন্য বাইক চালানোটা জরুরি, দেখেশুনে সাবধানে চালানোটা দরকারী, আর হাতে স্পেয়ারেবল পয়সাকড়ি থাকলে, দামী মালপত্র কিনে পরে ফেলা ভালো। কিন্তু তার জন্য বেশি চাপ নিয়ে ফেলা বোকামি।
(এসব আমার মতামত, আমি কোন হনু নই যে আমি যা বলছি, সেটাই ঠিক; আপনি নিজে যেটা ভালো বুঝবেন, দয়া করে সেটাই করবেন)
জয় হিন্দ।
No Comment! Be the first one.