#দাদার_মোটরসাইকেল_বিলাপ (৩১) #বাকি_রাখা_খাজনা #মোটে_ভালো_কাজনা
আপিসের কাজ আজ বেশ তাড়াতাড়ি শেষ; আর আমি যা সাধারণতঃ করে থাকি – আহার নিদ্রা মৈথুনের হাতছানি উপেক্ষা করে, বাইক নিয়ে হঠাৎই বেরিয়ে পড়েছিলাম; কোন গন্তব্য নেই, প্রত্যেকবারের মতন, আজকেও ভেবেছিলাম “যাই, শক্তিগড়ের ল্যাংচা খেয়ে আসি“। বেরিয়েই বুঝতে পেরে গেছি – ও হরি – একি অবস্থা – রাস্তায় পুলিশ আর পুলিশ থিক থিক করছে, ২০ মিটার অন্তর একজন করে ডিএসপি, এসপি নিজে ট্রাফিক সামলাচ্ছেন, রাস্তায় জনসমুদ্র… কি ব্যাপার?? নাকি গলসীতে জনসভা করতে #যুবরাজ_আসছেন। পুলিশের সাথে আমার বেশ অম্লমধুর সম্পর্ক আরকি – সাধারণতঃ আমায় কখনও আটকায় না (ওই রতনে রতন চেনে ব্যাপার আর কি), কিন্তু আজকে তারা বেশ গাঁইগুঁই করেই আমাকে ছেড়ে দিলো; কিন্তু এগোবো আর কোথায়? অসংখ্য বাস, ট্রাক, ট্র্যাকটর এর পেছনে আটকে, আমিও অপেক্ষা করতে থাকলাম… এই বুঝি রাজদর্শণ হবে। অবশেষে তিনি এলেন – এগারোটা গাড়ির ক্যাভালকেড নিয়ে – আগে চারটে পুলিশের স্করপিও গাড়ি, একটা ইলেকট্রনিক জ্যামার গাড়ি, কয়াভালকেড নেতৃত্ব দিচ্ছেন একজন ডিআইজি; পিছনে তিনটে পুলিশের গাড়ি, মধ্যিখানে একটা ভিআইপি আর দুটো ডামি গাড়ি… গ্রীন করিডর মাড়িয়ে ১২০ স্পীডে পাঁই পাঁই দৌড়োলো। আসেপাশে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম ৩১ বছর বয়সী যুবরাজ দেশের কণিষ্ঠতম এমপি… বেহালার এম পি বিড়লা ইস্কুলে পড়েছেন এবং দিল্লির এক ভূয়ো কলেজ (অরিন্দম চৌধুরী খ্যাত IIPM) এর স্নাতক; এবং সবচেয়ে জরুরি… #পিসির_ভাইপো।
যুবরাজ পেরোলেন, ট্রাফিক খুললো, আমিও একটু এগিয়ে বর্ধমানের আগেই দাঁড়ালাম একটু চা খেতে। খেয়াল করলাম… ভাইজার ধোঁয়া ধোঁয়া – কি ব্যাপার? যুবরাজ দেখে চোখে জল??
বাবার কথা হঠাৎই মনে পড়ে গেল; আশিতিপর বৃদ্ধ, জ্যোতি বসু মহাশয়ের খুবই স্নেহধন্য, তিরিশ বছর ধরে বাড়ির একটা ভোট লালদূর্গের বাইরে পড়ে নি; সেই বাবা, মাকে জোর করে নিয়ে গিয়ে ঘাসফুলে ছাপ মেরেছিলো। বাবা সবসময় আমাদের বলে গেছে… “বাবা.. পড়াশোনা করো, পড়াশোনা না করলে মনন তৈরি হবে না। ব্যাক্তি বড় নয়, মতাদর্শ বড়। আত্মশ্লাঘা বড় নয়, দেশ বড়। সত্তা বড় নয়, সেবা বড়। পয়সা বড় নয়, পরিশ্রম বড়। চেয়ার বড় নয়, মানুষ বড়। গাড়ি বড় না, খিদে বড়।” সেই বাপের ছেলে হয়ে জীবনের ২৮ বছর মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নিজের জীবনকে বাজি রেখে দেশসেবা করা, নতুন বিয়ে করা বউকে ছেড়ে বরফরাজ্যে বসবাস, নিজের দুই সন্তানের জন্মের সময় না থাকা — সবকিছু হঠাৎই যুবরাজের ১২০ স্পিডের ধোঁয়ার সামনে ম্লান হয়ে গেল। মনে হলো, যা শিখলাম, যা বুঝলাম, যা করলাম… সব মিথ্যে?? একটা বাইকে চড়ে লক্ষ লোকের ভিড়ে যুবরাজের পার হওয়া দেখছি? লক্ষ লোকে উন্মত্ত – যুবরাজ আসবে, কিছু বলবে, আমাদের অবস্থা ফিরবে। রক্তাক্ত সৈনিক, ঋণগ্রস্ত চাষা, বুকে রক্ত তোলা মজুর, চোখের ছানি না কাটাতে পারা শিক্ষক… আমরা সবাই লাইনে দাড়িয়ে যুবরাজকে অভিবাদন করবো.. যুবরাজের গাড়ি ছুটবে। চা খেতে খেতে নিজেকে বোঝালাম… “বেশি ভাবিস না ওয়াড়া; লোকে কি বলবে না বলবে ভেবে কি সৈনিকবৃত্তি বেছেছিলিস নাকি – ভালবাসতিস তাই বেছেছিস। ওই চোদু সালমান খানের তো কোটি ভক্ত, তাই বলে কি সালমান খান হতে চাস নাকি? চা খা… আর দুঃখ হলে তার উপায় তো হাতেই আছে… #মারো_থ্রটল #চালাও_পানসি_বেলঘরিয়া… বাইক ওঠা, বেরিয়ে পড় – যুবরাজ থোড়াই না পারবে করতে?? #চে_মরেছে, চে র ভাবনা থোড়াই না মরবে??
(এসব শুধুমাত্রই আমার নিজস্ব ব্যাক্তিগত বিলাপ, আগেই বলেছি যে, আমি কোন হনু নই যে আমি যা বলছি, সেটাই ঠিক; বা আমার কথা অনুযায়ি কাউকে কিছু করতে হবে। আপনারা সবাই বোদ্ধা, আপনারা নিজেরা যেটা ভালো বুঝবেন, দয়া করে সেটাই করবেন)
জয় হিন্দ।
No Comment! Be the first one.