গিন্নি কর্মসূত্রে গেছেন দিল্লি দিন পনেরোর জন্যে, অতয়েব ছানাপোনাদের ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ডিনার, পড়াশোনার গুরুদায়িত্ব এই শর্মার জিম্মায় | সকাল বেলা মুরগি, রাত্তিরে চাওমিন , আর তারই মধ্যে তৃতীয় ভাষা বাংলায় কচিকাঁচাদের ওস্তাদ করে তোলার চাপে দাদা নাজেহাল|
এরই মাঝে হটাৎ এসে পড়লো ..পড়ে পাওয়া রোববার, প্রত্যেকবারের মতোই সকাল সাড়ে চারটাতে উঠে পড়েছি একটু মোটরসাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে আসবো বলে | ছানাপোনাদের না জাগিয়ে তাড়াতাড়ি এক কাপ কফি , জামা জুতো পরে বেরিয়ে পড়লাম …কিন্তু প্রতিজ্ঞা করে নিলাম যে সাড়ে আটটার মধ্যে ফেরত আসতে হবে … মুরগি আর কাতলা মাছ কিনে নিয়ে |
বেরোনোর সময় সত্যি ভাবিনি কোথায় যাবো … শুধু মাথার মধ্যে ছেলেকে পড়ানো সহজপাঠ এর কয়েকটা লাইন …
“ক্ষুদিরাম পাড়ে জাম
মধু রায় খেয়া বায়
জয়লাল ধরে হাল
অবিনাশ কাটে ঘাস ”
ভেবে রেখেছি “শ্বেত-অগ্নি” যেদিকে নিয়ে যায় যেতে থাকবো | দেখি, সে শালা পানাগড় বাইপাস ধরে কাংশা, বনাঞ্চল, ত্রিলোকচন্দ্রপুর পেরিয়ে বোলপুর এর রাস্তা ধরেছে …ভাবলাম … তাহলে কি মোল্লার দৌড় মসজিদ – শান্তিনিকেতন ?? কিন্তু না … “শ্বেত-অগ্নি” অজয় নদীর পার ধরে হটাৎ বাক নিলো বামদিকে …ছোট রাস্তা, লাল মাটি আর শাল-শিমুল এর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ছুটে চলেছে ঢুক ঢুক ঢুক ঢুক ঢুক করে | বর্ষা শেষ হবার পথে , হটাৎ গজিয়ে ওঠা গাছ গাছালির গায়ে সবুজের জামা , কাশের দল বেড়ে চলেছে ফুরফুরিয়ে – হটাৎ করে সাদা ফুল ফুটিয়ে আমাদের চমকে দেবে বলে |সময়ের হুশ চলে গেছে , প্রকৃতিও দেখছি না , আছে শুধু একটা অনুভব …আমি আর ঢুক ঢুক ঢুক ঢুক ঢুক ….
হটাৎ দেখি দাঁড়িয়ে আছি ইচ্ছাই ঘোষের দেঊল এর সামনে | এসেছি বেশ কয়েকবার …তাই পোড়ামাটির স্থাপত্যের গুনকীর্তন আর বেশি করলাম না | এক কাপ চা আর একটি সিগাররেট ধ্বংস করে তাড়াতাড়ি ফেরার রাস্তা ধরলাম | ফেরার পথে গ্রামের হাট থেকে মুরগি আর কাতলা মাছ ও কেনা হলো | বাড়ি ফেরা ….
সাথে থেকে গেলো শুধু একটাই ভালো লাগা …একলা রাস্তা , একলা আমি , আর মন কেমন করা ঢুক ঢুক ঢুক ঢুক | শিরা – উপশিরা – ধমনী – রক্তে আমার পেট্রল এর নেশা ….
No Comment! Be the first one.